থার্টি-ফাস্ট নাইট উদযাপন : শরীয়াহ যা বলে

থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন বিধর্মীদের সংস্কৃতি।
পশ্চিমাদের এই কালচার বিগত কয়েক দশক যাবত বাংলাদেশে চর্চিত হচ্ছে। কোন মুসলমান এটি উদযাপন করতে পারে না। থার্টিফার্স্ট নাইট বা নববর্ষ পালন করার কোনো বিধান ইসলামি শরিয়তে নেই।
ইসলামি শরিয়তে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা—এ দুই দিবসের বাইরে আলাদা আনন্দ-উৎসবের জন্য কোনো দিবস নেই। এবং এই দুই উৎসবের দিবসেও উৎসবের প্রকৃতি কেমন হবে—সেটা আল্লাহ তাআলা নবিজির মাধ্যমে শিখিয়ে দিয়েছেন।
এর বাইরে অন্য কোনো উৎসব নবিজি সা. পালন করেননি, সাহাবায়ে কেরাম পালন করেননি এবং সালাফে সালেহিনের কেউও পালন করেননি। না নববর্ষ কেউ পালন করেছেন, আর না জন্মদিন পালন করেছেন।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায়
এসে দেখলেন, মদিনাবাসী দুটি বিশেষ দিন তারা আনন্দ-উৎসব করে। তখন নবিজি জিজ্ঞাসা করেন, এই দিন দু’টি আসলে কী?
তারা উত্তর দেন—জাহিলিয়াতে আমরা এই দুটি দিনে আনন্দ-উৎসব করতাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—আল্লাহ তাআলা এই দুটি দিনের পরিবর্তে তোমাদেরকে এরচেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা।”
(সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং-১১৩৪; সুনানুন নাসায়ি, হাদিস নং-১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১২০০৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শক্তভাষায়
বিধর্মী ও তাদের সংস্কৃতির সাদৃশ্যের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে—
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ، وَلَا بِالنَّصَارَى
“যে অন্যদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদি এবং নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না।” [সুনানুত তিরমিযি, হাদিস নং-২৬৯৫]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. বলেছেন—‘যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে।’ আসসুনানুল কুবরা, হাদিস ১৫৫৬৩।
দ্বিতীয়ত কথা হলো থার্টি-ফাস্ট নাইট উদযাপন একটি অনর্থক কাজ এবং ক্ষেত্রবিশেষ বিভিন্ন রকম গুনাহের উপলক্ষ। আর হাদিসে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনর্থক কাজ থেকে উম্মতকে বিরত থাকতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে—
من حسن إسلام المرأ تركه ما لا يعنيه
‘ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো—অনর্থক-অর্থহীন বিষয় মানুষ ছেড়ে দেবে। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ২৩১৭)
থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের আরো যেসকল ক্ষতিকর দিক রয়েছে তা হলো—এ রাতে আতশবাজি ফোটানো ও প্রচন্ড শব্দে পটকা ফোটানোর কারণে হাসপাতলে অসুস্থ রোগীরা কষ্ট পায়, বাসা বাড়িতেও বয়স্ক এবং শিশুরা কষ্ট পায়। কোটি কোটি অর্থের অপচয় ঘটে। এমনকি সাম্প্রতিক সময় নারী ও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। মুসিলম পিতামাতার সন্তানরা এ রাতে ভেসে যায় আল্লাহর নাফরমানীর সয়লাবে। সর্বত্র ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশা প্রকট রূপ ধারণ করে। তরুণ-তরুণীরা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়, রেস্তোরাঁ, পার্ক-উদ্যান, নাইট ক্লাব ইত্যাদিতে। বহু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে থাকে।
একজন সাধারণ রুচিশীল মানুষও থার্টি ফার্স্ট নাইটের এই নোংরামি সমর্থন করতে পারেন না।
এই ধরনের পাপাচার বন্ধ করতে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের অবশ্যকর্তব্য। আর একটি মুসলিম দেশের অভিভাবক হিসেবে দেশের সরকারের কর্তব্য এই ধরনের চরিত্রবিধ্বংসী বিজাতীয় উৎসব কঠোরহস্তে দমন করা।
তাছাড়া নববর্ষ বা বর্ষপূর্তি পালন ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলাম আমাদেরকে প্রত্যেক দিন, প্রতি রাত এবং প্রতি মুহূর্তকে উদযাপন করতে বলে। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলেছেন—
إِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالمَسَاءِ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالصَّبَاحِ، ... فَإِنَّكَ لاَ تَدْرِي يَا عَبْدَ اللهِ مَا اسْمُكَ غَدًا.
সন্ধ্যায় উপনীত হলে প্রভাতের অপেক্ষা করো না। আর প্রভাতে করো না সন্ধ্যার অপেক্ষা।... কারণ,
হে আল্লাহর বান্দা! তোমার তো জানা নেই কী হবে তোমার বিশেষণ আগামীকাল (জীবিত না মৃত!)।(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩৩)
তাই ইসলামের নেয়ামত পেয়েও বিধর্মীদের সংস্কৃতি ধার নেওয়া আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা।
ফিকহে হানাফির বিভিন্ন গ্রন্থে রয়েছে—
নববর্ষের দিন এমন কিছু করা নিষিদ্ধ যা এই দিনের আগ বা পরে করা হয় না। ইমাম আবু জাফর কাবীর থেকে বর্ণিত, ‘যদি কোনো মুসলিম পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদতে ডুবে থেকে নববর্ষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কোনো অমুসলিমকে একটি ডিমও উপহার দেয়, তার সব ইবাদত বাতিল হয়ে যাবে। সে কা*ফের হয়ে যাবে।’ [ফাতাওয়ায়ে কাযীখান: ৩/৩৬২]
জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউন, করাচীর ফতোয়ায় এসেছে—
থার্টিফার্স্ট নাইট বা নববর্ষ উদযাপন এবং শুভেচ্ছা জানানো ভিত্তিহীন কাজ। নববর্ষের আগমনে আনন্দ উদযাপন, আতশবাজি ফোটানো, হাততালি দেওয়া, শিস দেওয়া, নাচ-গান করা, নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেসেজ পাঠানো—এগুলো সবই বিধর্মীদের সংস্কৃতি ও তাদের অনুকরণ। আর ইসলামী শরীয়াহ অমুসলিমদের অনুসরণ ও অনুকরণ এবং তাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।
(ফাতাওয়া নং 144406100517)
তাই মুসলিস হিসেবে আমাদের উচিৎ এসব শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতিকে পরিহার করে নতুন বছর ও মাসের শুরুতে সেই দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়া—যা সাহাবায়ে কেরাম পাঠ করতেন। আর সে দোয়াটি হলো—
” اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ، وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ، وَجَِوَازٍ مِنَ الشَّيْطَانِ“
অনুবাদ : 'হে আল্লাহ! আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (তাবারানী ফিল আওসাত ১০/১৩৯)
আর থার্টি-ফাস্ট নাইটকে উপলক্ষ্য করে ‘নিউ ইয়ার কেক বানানো, টি শার্ট বানানো—এসবের মাধ্যমে যেহুতু এ ধরনের বিধর্মী সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করার দিকটি স্পষ্ট হয়, তাই এগুলো তৈরী করা, ক্রয় করা, পরিধান করা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকাই কাম্য।
0 মন্তব্যসমূহ