তাকওয়া : জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার

তাকওয়া : জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার

🌿 তাকওয়া : জীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার

✍️ বিনতে ইসমাঈল

তাকওয়া—এটি কেবল একটি চার অক্ষরের শব্দ নয়; বরং একজন মুমিনের আত্মা ও জীবনের মূল চালিকাশক্তি। এটি মানুষকে গুনাহ থেকে রক্ষা করে, আল্লাহর নৈকট্য এনে দেয় এবং জান্নাতের দিকে এগিয়ে নেয়। তাকওয়া ছাড়া কোনো ঈমান পূর্ণতা পায় না।

কুরআন মাজীদে মুত্তাকীদের জন্য অসংখ্য সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আল্লামা ফাইরোযাবাদী (রহ.) বলেন, কুরআনে প্রায় ২৭টি স্থানে মুত্তাকীদের জন্য সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য আয়াত পেশ করা হলো—


✅ ১. আল্লাহর সাহায্যের সুসংবাদ

إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁদের সাথে থাকেন, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।”
সূরা নাহল (১৬:১২৮)

✅ ২. গুনাহ মাফ ও বিরাট আজর

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا
“যে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং তাকে বিশাল পুরস্কার দান করেন।”
সূরা ত্বালাক (৬৫:৫)

✅ ৩. মাফ ও দয়ার সুসংবাদ

وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
সূরা আনফাল (৮:৬৯)

✅ ৪. সব কাজ সহজ হয়ে যাওয়া

وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
“যে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার সব বিষয়ে সহজতা করে দেন।”
সূরা ত্বালাক (৬৫:৪)

✅ ৫. অকল্পনীয় রিযিক

وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“আল্লাহ তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।”
সূরা ত্বালাক (৬৫:৩)

✅ ৬. সফলতার ঘোষণা

إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا
“নিশ্চয়ই মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা।”
সূরা আন-নাবা (৭৮:৩১)

✅ ৭. সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা

إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
“আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত সে-ই, যে সর্বাধিক মুত্তাকী।”
সূরা হুজুরাত (৪৯:১৩)

✅ ৮. আল্লাহর ভালোবাসা

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।”
সূরা তাওবা (৯:৪)

✅ ৯. কবুলিয়্যাতের নিশ্চয়তা

إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
“আল্লাহ তো শুধু মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন।”
সূরা মায়িদা (৫:২৭)

✅ ১০. কিয়ামতে শ্রেষ্ঠত্ব

وَالَّذِينَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“কিয়ামতের দিন মুত্তাকীরা তাদের (কাফেরদের) উপরে থাকবে।”
সূরা বাকারা (২:২১২)

✅ ১১. ভয় ও দুঃখমুক্তি

فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
“যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”
সূরা আরাফ (৭:৩৫)

✅ ১২. জান্নাত ও আল্লাহর সান্নিধ্য

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ، فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِندَ مَلِيكٍ مُّقْتَدِرٍ
“নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা জান্নাত ও নহরে থাকবে, মর্যাদাপূর্ণ আসনে, সর্বশক্তিমান রাব্বের সান্নিধ্যে।”
সূরা ক্বমার (৫৪:৫৪-৫৫)


🕋 রাসূল ﷺ ও সাহাবাদের তাকওয়া

فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ
“যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে চলে, সে নিজের দ্বীন ও সম্মানকে নিরাপদ রাখে।”
— সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৫৯৯

সাহাবীগণ ছিলেন তাকওয়ার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যেমন, হজরত আবু বকর (রাযি.) যখন জানলেন তাঁর খাদ্য হারাম উৎস হতে এসেছে, তখন তিনি তা গলা দিয়ে বের করে দেন (সহীহ বুখারী: ৩৮৪২)।

তাকওয়ার এমন দৃষ্টান্ত পরবর্তী যুগের আলেমদের জীবনেও রয়েছে। ইমাম আবু ইসহাক আশশীরাযী (রহ.) একবার মসজিদে ফেলে যাওয়া নিজের দীনার সন্দেহবশত না নিয়ে ফিরে যান। এমন তাকওয়ার উদাহরণ আজও অনুপ্রেরণা জোগায়।


📌 উপসংহার

আজকের সমাজে যেখানে হারাম সর্বত্র, তাকওয়াই আমাদের একমাত্র রক্ষা-কবচ। হারাম শুধু এড়িয়ে চলা নয়; বরং সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকেও বিরত থাকা একজন মুমিনের দায়িত্ব।

اللَّهُمَّ اجعلنا من المتقين
_হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন—আমীন।_


📚 প্রসঙ্গ: তাকওয়া, ঈমান, আখিরাত, নৈতিকতা, ইবাদত, দ্বীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ