রিসালাতের সাক্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সম্মান করা। তিনি সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, মানবজাতির নেতা, নবী-রাসূলদের প্রধান। তিনি আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা, তাঁর হাবীব, তাঁর সবচেয়ে সম্মানিত বান্দা, সর্বযুগের সকল মানুষের নেতা।
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
‘‘আমি তো তোমাকে রাসূল বানিয়েছি কেবল বিশ্ব জগতের রহমতস্বরূপ ।
সকল মানুষের ঊর্ধ্বে তাঁর সম্মান। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন:
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ وَأُولُو الأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُهَاجِرِينَ
‘‘মুমিনদের নিকট নবী তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিনগণ ও মুহাজিরগণ অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের ঘনিষ্টতর।
আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلا فَخْرَ وَبِيَدِي لِوَاءُ الْحَمْدِ وَلا فَخْرَ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ يَوْمَئِذٍ آدَمَ فَمَنْ سِوَاهُ إِلا تَحْتَ لِوَائِي وَأَنَا أَوَّلُ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الأَرْضُ وَلا فَخْرَ
কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানদের নেতা, তবে এতে কোনো অহংকার নেই। আমার হাতেই প্রশংসার ঝান্ডা থাকবে, তবে এতে কোনো অহংকার নেই। আদম থেকে শুরু করে যত নবী আছেন তারা সবাই আমার ঝান্ডার নীচে সমবেত হবেন। আমিই প্রথম মাটি ফুড়ে পুনরুত্থিত হব, তবে এতে কোনো অহংকার নেই।
মোট কথা বাদ আর খোদা বুযূর্গ তুইয়ি কিস্সায়ে মুখতাসার।
আল্লাহ তাআলার পর আপনিই মহান , এটাই আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
অপর দিকে রাসুল সা. বলেছেন
عَن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَلَدِهِ وَوَالِدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
আনাস বিন মালিক কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তম হয়েছি।
অন্যান্য সকল মানুষের থেকে পৃথকভাবে সম্মানের সাথে তাঁকে ডাকতে হবে এবং তাঁর ডাকে সাড়া দিতে হবে। সর্বাপেক্ষা সম্মানের সাথে তাকে স্মরণ করতে হবে।এটাই ঈমানের দাবী।এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন:
لا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا
‘‘রাসূলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মত গণ্য করো না।
এমন রাসূলকে ছোট্ট করার সামান্য থেকে সামান্য ছিদ্রপথও আল্লাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقُوۡلُوۡا رَاعِنَا وَ قُوۡلُوا انۡظُرۡنَا وَ اسۡمَعُوۡا ؕ وَ لِلۡكٰفِرِیۡنَ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۱۰۴﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রা‘ইনা’* বলো না; বরং বল, ‘উনজুরনা’ আর শোন, কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
এর অর্থ আমাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ ও আমাদের দিকে খেয়াল করুন! কোন কথা বুঝা না গেলে এই শব্দ ব্যবহার করে শ্রোতা নিজের প্রতি বক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করত ।সাহাবাগণ এ শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করত।। কিন্তু ইয়াহুদীরা বিদ্বেষবসত এই শব্দের কিছুটা বিকৃতি ঘটিয়ে ব্যবহার করত যাতে তার অর্থের পরিবর্তন ঘটতো এবং এর মাধ্যমে তারা রাসূলের সাথে ঠাট্টা করত। যেমন তারা বলত, رَاعِيْنَا 'রায়ীনা' (আমাদের রাখাল) অথবা رَاعِنَا 'রায়েনা' (নির্বোধ)।
তাই মহান আল্লাহ বললেন, মুমিনগণ, তোমরা ‘রা‘ইনা’* বলো না; বরং বল, ‘উনজুরনা’।
যাতে রাসূলের সাথে ঠাট্টার বা তাকে ছোট করার এই সামান্য সাদৃশ্যতাও না থাকে।
মূলত রাসূল স. পেশাদার রাখাল ছিলেন না। হ্যাঁ সকল নবী রাসুলগণ বাকরী চড়িয়েছেন ধৈর্য্যের সবক নেওয়ার জন্য।কারণ কোন কোন উম্মত ছাগল 🐐 এর চেয়ে ঘারত্যাড়া।তো সেটা তো ছিল তো ছিল নবী হওয়ার প্রাথমিক ট্রেনিং।
নবীজী স. কে রাখাল বলে সর্বপ্রথম সম্বোধন করেছে ইয়াহুদীরা। অবশ্য সাম্প্রতিক কিছু নাস্তিক ব্লগাররাও আল্লাহর রাসূল কে পেশাদার রাখাল দাবি করে নবীজী কে খাটো করার চেষ্টা করে।
কিন্তু সম্প্রতিক ভাইরাল বক্তা ডঃ মিজানুর রহমান আজহারী যেন ইয়াহুদী ও নাস্তিকদের চেয়ে আরো একধাপ নিচে নেমে নবীজীকে cowboy বলে মন্তব্য করেছেন।যা খুব দুঃখজনক।
ব্যক্তিগতভাবে আমি হুজুরের একজন ফ্যান। কিন্তু তার এমন লাগামহীন শব্দচয়ণ কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। যেখানে রাসূলকে রাইনা বলা যাবে না ,যার অর্থ ও উদ্দেশ্য ভালো ছিলো, কিন্তু রাখাল শব্দের সাথে সাদৃশ্যতার কারণে সতর্কতাবসত রাইনা বলাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে রাসূল রাখাল বা cowboy বলা কিভাবে বৈধ হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
আমীন।
0 মন্তব্যসমূহ