বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা। ইসলামে এর মানদণ্ড কী?




 প্রিয় বন্ধুরা, সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের অনুভূতির দুটি দিক ছিল।একটি ভালোবাসা আর একটি ঘৃণা ।একটি বিষয়কে যখন মানুষ পছন্দ করে ,তবে এর বিপরীতধর্মী বিষয়টিকে অবশ্যই সে অপছন্দ করবে। ঘৃণা করবে।

ভালোবাসার দাবি কি? আপনি যদি কাউকে ভালবাসেন,তবে তার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলবেন , তাকে ভালোবাসবেন। কেউবা আবার বন্ধুত্বও গড়ে তুলবেন।আর যাকে আপনি ঘৃণা করেন, তার সাথে আপনার শত্রুতা থাকবে।এই যে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা শরীয়তের দৃষ্টিতে আল ওয়ালা ওয়াল বারাআ বলা হয়।


এই পৃথিবীতে যারা ঈমানের নেয়ামত ও ইসলামের আলো থেকে বঞ্চিত, তাদের কাছে বর্ণ ও বংশ, ভাষা বা ভূখণ্ড, সংস্কৃতি বা মতবাদ, রাজনৈতিক দল কিংবা দর্শন ইত্যাদি বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে জাতীয়তা নির্ধারিত হয়, আর এই জাতীয়তাই তাদের কাছে মুয়ালাত ও বারাআত (বন্ধুত্ব ও সম্পর্কচ্ছেদ) এবং পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার মানদণ্ড হয়ে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা সরাসরি জাহেলিয়‍্যাত। ইসলামের দৃষ্টিতে বর্ণ বা বংশ, ভাষা বা ভূখণ্ড নির্বিশেষে সকল মুমিন এক জাতি। আর অন্যান্য অমুসলিম বিভিন্ন জাতি হলেও ইসলামের বিপরীতে তারা অভিন্ন জাতি। ্


আমি যদি মুমিন হই তাহলে আল্লাহর সব মুমিন বান্দার সাথে আমার বন্ধুত্ব ও ভালবাসা। তা সে যে বর্ণের, যে ভাষার, যে বংশের বা যে দেশেরই হোক না কেন। তার রাজনৈতিক পরিচয়ও যা-ই হোক না কেন। তার সাথে আমার ঈমানী বন্ধুত্ব সর্বাবস্থায় অটুট থাকবে। মুমিনের সাথে আমার এই বন্ধুত্ব ঈমানের কারণে এবং আল্লাহর জন্য, সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে নয়। এ কারণে আল্লাহর নাফরমানীর ক্ষেত্রে না তার সঙ্গ দিব, না তার সাহায্য করব। সে যদি কোনো অমুসলিমের উপরও জুলুম করে আমি তার সহযোগিতা করব না; বরং সাধ্যমত তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করব।


আর যে অমুসলিম (দ্বীন ও আখিরাত অস্বীকারকারী কিংবা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীনের অনুসারী , তার সাথে আমার আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ। কারণ সে আমার, তার ও গোটা জগতের রব আল্লাহর সাথে বিদ্রোহকারী। 

তবে যেহেতু এই শত্রুতা শুধু আল্লাহর জন্য, কোনো সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে নয়, এ কারণে আমি তার সাথে কখনো না-ইনসাফী করব না; বরং যদি দেখি, সে মজলুম হচ্ছে আর তাকে জুলুম থেকে মুক্ত করার সামর্থ্য আমার আছে ,তাহলে জুলুম থেকে মুক্ত করতেও আমি পিছপা হব না।


তবে কোন কাফেরদের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক থাকতে পারে না, আমার বন্ধুত্ব থাকতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা সূরা মুমতাহিনার ৬০ নম্বর আয়াতে বলেছেন,


قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أَسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَ الَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَءُوا مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَ الْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَةً 



তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, 'তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করলাম। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হল ; যদি না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আন'। -

একটু চিন্তা করে দেখুন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম শুধু এতটুকুই বলেননি, আমি তোমাদের মূর্তিদের থেকে মুক্ত। এতটুকু বলে ক্ষান্ত হলেন না।নিজ জাতির প্রতিও একইবাক্য ছুড়ে দিলেন। তাদের বাতেল মাবুদের সাথে সাথে তাদের ইবাদতকারী ও অনুসারীদেরও প্রত্যাখ্যান করলেন। তাদের সাথেও শত্রুতা ও বিদ্বেষের ঘোষণা দিলেন। বললেন 

إِنَّا بُرَءُوا مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ


তোমাদের সঙ্গে এবং তোমাদের বাতেল মাবুদদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

এখানে আল্লাহ তায়ালা ভ্রান্ত ধর্মের অনুসারীদের কথা আগে বলেছেন ,এবং তার পর মিথ্যা উপাস্যদের কথা বলেছেন। 

এমনকি একটু বলেই ক্ষান্ত হলেন না,আরো তাদের দিকে শত্রুতার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। বলিষ্ঠ কণ্ঠে তাঁদের জানান দিলেন,

وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَ الْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَةً


তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর উপরে ঈমান আন'।



يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ


* 'হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু; অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থেক। আতাগাবুন (৬৪): ১৪


এ প্রসঙ্গে কুরআনে হাকীমের শিক্ষা অতি স্পষ্ট। কুরআনে আমাদের মনোযোগের সাথে পাঠ করা উচিত যে, ইবরাহীম আ. তার মুশরিক পিতা আযরের সাথে কী আচরণ করেছিলেন, নূহ আ.-এর কাফির পুত্রের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন। লূত আ.-এর স্ত্রী সম্পর্কে কী বলেছেন আর এর বিপরীতে ফিরাউনের মুমিন স্ত্রী সম্পর্কে কী বলেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালিবকে কী বলেছেন, যিনি তাঁর সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন, কিন্তু কুফর ও শিরক থেকে তওবা করে ইসলাম কবুল করেন নি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ