**প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।**
আজ আমি আপনাদের সামনে একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। গত কিছুদিন আগে মাগুরায় মাত্র ৮ বছরের একটি নিরীহ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তিন নরপিশাচের হাতে নির্মমভাবে লাঞ্ছিত হয়ে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। এই ঘটনা শুনে প্রতিটি মানুষের হৃদয় কেঁদে উঠে, প্রতিটি বিবেক প্রশ্ন করে—এ কী নিষ্ঠুরতা! এ কী পাশবিকতা!
এই ঘটনা শুধু একটি শিশুর মৃত্যু নয়, এটি আমাদের সমাজের বিবেকের মৃত্যু, মানবতার মৃত্যু। আজ আমি এই ঘটনার আলোকে ইসলামের দিকনির্দেশনা এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে ইসলামের কঠোর অবস্থান নিয়ে আলোচনা করব।
---
### **১. ইসলামে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা:**
ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে। ইসলাম নারীকে মা হিসেবে, বোন হিসেবে, কন্যা হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে বসিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, الجنة تحت أقدام الأمهات
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।"** (সুনান আন-নাসায়ী)
একটি শিশু কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করা এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, **مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ وَأَحْسَنَ إِلَيْهِمَا، دَخَلَ مَعِيَ الْجَنَّةَ**
*(সহীহ বুখারী)*
**"যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তানের লালন-পালন করবে এবং তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে, সে আমার সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"** (সহীহ বুখারী)
এই ইসলাম যে নারীকে এত সম্মান দেয়, সেই ইসলামে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের স্থান নেই। ইসলাম ধর্ষণকে শুধু অপরাধই নয়, মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করে।
---
### **২. ধর্ষণের বিরুদ্ধে ইসলামের কঠোর শাস্তি:**
ইসলাম ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা কঠোর শারীরিক শাস্তি। এই শাস্তির উদ্দেশ্য হলো সমাজে ভয় ও সতর্কতা সৃষ্টি করা, যাতে কেউ এমন জঘন্য অপরাধ করতে সাহস না পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
সূরা আন-নূরের ২৩ নং আয়াতের আরবি পাঠ নিম্নরূপ:
**আরবি:**
> إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
**"আর যারা নারীদের উপর জুলুম করে এবং সতী-সাধ্বী নারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।"** (সূরা আন-নূর, ২৪:২৩)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
مَنِ اعْتَدَى عَلَى امْرَأَةٍ فَغَصَبَهَا فَإِنَّهُ يُقْتَلُ.**
**"যে ব্যক্তি কোনো নারীর ওপর জোরপূর্বক আক্রমণ করে, তার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।"** (সুনান আবু দাউদ)
এই কঠোর শাস্তির মাধ্যমে ইসলাম সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইসলাম চায় না কোনো নারী বা শিশু নির্যাতনের শিকার হোক।
### **৩. মাগুরার ঘটনা ও আমাদের সমাজের দায়িত্ব:**
মাগুরার এই ঘটনা আমাদের সমাজের জন্য একটি বড় চিন্তার বিষয়। আমরা কি আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পারছি? আমরা কি আমাদের নারীদের সম্মান রক্ষা করতে পারছি? এই ঘটনা শুধু ধর্ষণকারীদের অপরাধ নয়, এটি আমাদের সমাজের ব্যর্থতা। আমরা যদি ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সমাজ গঠন করতাম, তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না।
ইসলাম শুধু শাস্তির বিধান দেয়নি, ইসলাম আমাদের দায়িত্বও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
**"তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।"** (সহীহ বুখারী)
আমাদের দায়িত্ব হলো আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিরাপদ করা। আমাদের দায়িত্ব হলো শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি বার্তা বয়ে এনেছে। আমাদেরকে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সমাজ গঠন করতে হবে। আমাদেরকে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদেরকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
আমরা যদি ইসলামের এই শিক্ষা মেনে চলি, তাহলে আমরা একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারব।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা আর কত নিষ্পাপ শিশুর লাশ দেখতে চাই? আর কত মা-বোনের ইজ্জত লুট হতে দেখব? সময় এসেছে—
🚨 আমাদের সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা দিতে হবে।
🚨 অশ্লীলতা ও হারাম সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে।
🚨 ধর্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।
আজ যদি আমরা চুপ থাকি, তাহলে আগামীকাল আমাদের ঘরেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আসুন, সত্যের পক্ষে দাঁড়াই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি!
**আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করার তাওফিক দিন। আমীন।**
**ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।**
0 মন্তব্যসমূহ